প্রসঙ্গঃ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লানতীর ভাই মির্জা গোলাম কাদির বেগ কি আ’লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (রাহিমাহুল্লাহ)’র শিক্ষক ছিলেন (!)

——————————————————————–

আমরা সবাই জানি গোলাবী-দেওবন্দী-সালাফী-লা মাযহাবী-আহলে হাদীস এদের গোঁড়া একটাই। আর সেটি হল ভারতবর্ষে ওহাবীবাদের জনক রায় ব্রেলীর সাইদ আহমদ ব্রেলভী এবং তার প্রধান সহযোগী ইসমাঈল দেহলভী। এই দুজনের হাত ধরে উপমহাদেশে বাতিল ফিরকা দল উপদলের উৎপত্তি। এরা যতই বলুক আমরা একে অপরের বিরোধী, গবেষনা করলে জানা যায় এরা একে অপরের জাত ভাই। গোলাবীদের বই পুস্তক তল্লাশি করলে দেওবন্দী শয়তান গুরুদের নামের শেষে রহ. দেখা যায়। আবার দেওবন্দীদের বই পুস্তক তল্লাশি করলে আহলে হাদীস-লা মাযহাবী গুরুদের নামের শেষে রহ. পাওয়া যায়। এমন নজীর ভুরি ভুরি আছে। তারা যেহেতু সবাই জাত ভাই, তাদের পেট একটাই। তখন তাদের লক্ষ্য হল সুন্নীদের ঘায়েল করা। যেহেতু সুন্নীরা তাদের গোঁমর ফাঁস করে দিয়েছে। সে মোতাবিক তারা সর্বদা এটাই চায় কিভাবে সুন্নীদেরকে আক্রমণ করা যায়।

তাদের এই কুটচালে তাদের সবার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সুন্নীয়ত এবং সুন্নী আকাবিরগণের বদনাম করাই হল তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। হোক সেটা সত্য আধা সত্য কিংবা মিথ্যা। আওয়ামদেরকে মিথ্যা বললে তো তারা আর সত্য খুঁজে পাবে না। তাই অনলাইনে তাদের মূল টার্গেট এখন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন। কারন হল তিঁনি বাতিলদের দূর্গ ধ্বংস করেছে, বিনাশ করে দিয়েছেন তাদের বাতিল মতবাদ, শক্ত হাতে প্রতিরোধ করেছেন তাদের সকল ভন্ডামী আর জালিয়াতির, তাদের হস্তদ্বয়কে অবশ করে দিয়েছেন আর তাদের মূখে চুনকালি ছিটিয়ে দিয়েছেন আপন লিখায়।

আজ তার একটি নমুনা দেখাতে চাই। বাতেল গং (গোলাবী-দেওবন্দী-লা মাযহাবী) অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে যে আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) নাকি মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাই মির্জা গোলাম কাদের বেগের কাছে পড়াশোনা করেছেন (!)

এ কথা সত্যি যে আ’লা হযরত (রহ.) এর একজন শিক্ষকের নাম ছিল হযরত মাওলানা মির্জা গোলাম কাদির বেগ। আ’লা হযরত তার কাছে প্রাথমিক পর্যায়ের কিতাবাদি পড়েছেন। তবে তিনি মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাই ছিলেন না। এটা গোলাবী ওহাবী-দেওবন্দী ওহাবী-লা মাযহাবীদের কাট্টা মিথ্যাচার এবং প্রতারণা। তাদের এই মিথ্যাচার দেখে শয়তানও লজ্জা পায়।

সর্বপ্রথম আসুন দেখে নি আ’লা হযরত (রহ.) এর শিক্ষক মাওলানা মির্যা গোলাম কাদির বেগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানি।

হযরত মাওলানা হাকিম মির্যা গোলাম কাদির বেগ ১লা মহররম ১২৪৩ হিজরি মোতাবেক ২৫ জুলাই ১৮২৭ ঈসায়ীতে লক্ষ্মোর ঝাওয়ারী পল্লিতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মির্যা হাসান জান বেগ লক্ষ্মোর বাসস্থান ছেড়ে ব্রেলী শরীফে এসে বসতি স্থাপন করেন। তিঁনি ব্রেলীর জা’মে মসজিদের পূর্ব পাশে কেল্লা নামক মহল্লায় ঘর নির্মান করে যা এখনো বিদ্যমান। জনাব মির্যা গোলাম কাদির বেগ ইরান না তুর্কিস্থানের বংশোদ্ভূত ছিলেন না বরং মির্যা ও বেগ খেতাবদ্বয় তাঁর পূর্বপুরুষদেরকে মোগল সম্রাটরাই দিয়েছিলেন। তিঁনি প্রখ্যাত অলি হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র আওলাদ। আর হযরত আহরার ফারুকী ছিলেন বলে মির্যা সাহেবও হযরত সাইয়্যিদুনা ফারুকে আ’যম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র বংশধর ছিলেন। সুলতান জহির উদ্দিন বাবর ও তার পিতা উভয়ই হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র মুরিদ ছিলেন।
(ড. মুহাম্মদ হাসান রচিত ‘মাওলানা নক্বি আলি খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি আওর ইলমি ওয়া আদবি কারনামে; PhD থিসিস, Alahazrat.net)

জনাব মির্যা গোলাম কাদির বেগের সাথে আ’লা হযরত (রহ.)’র পিতা আল্লামা নক্বি আলি খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র খুবই ভালো বন্ধুত্ব ছিল। জনাব মির্যা সাহেব আ’লা হযরতকে পড়ানোর দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিলেন। অন্যান্য ছাত্ররা তাঁর দাওয়াখানায় পড়লেও আ’লা হযরতকে তাঁর বন্ধু নক্বি আলি খাঁন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র বাসায় গিয়ে পড়াতেন। আ’লা হযরত মিযান, মুনশায়িবসহ প্রাথমিক কিতাবগুলো জনাব মির্যা সাহেব থেকে শিক্ষা লাভ করেন।

জনাব মির্যা গোলাম কাদির বেগ তৎকালীন প্রখ্যাত আলেম, আবিদ, খোদাভীরু, নম্র-ভদ্র বিনয়ী ও খুবই চরিত্রবান ছিলেন। সর্বোপরি তিঁনি ছিলেন সুন্নাতে রাসূলের অনুসারী ছিলেন।
(তাজুশ শরীয়াহ আল্লামা আখতার রেযা খাঁন আযহারী রহ. রচিত হাকিকাতুল বেরেলভীয়্যাহ, দারুল মাকতাব, কায়রো মিশর থেকে প্রকাশিত)

তিঁনি ১ মুহররম ১২৩৬ হিজরি মোতাবেক ১৯১৭ সালে ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ব্রেলী’র বাকেরগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত হোসাইনবাগ কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

☞ তাঁর সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন- http://bit.ly/2GQbK4P

আসল হাকিকত এবং মিথ্যার মূলোৎপাটন-
——————————————————
বর্তমানে আ’লা হযরত বিদ্বেষীরা হযরত মাওলানা মির্যা গোলাম কাদির বেগকে নবি দাবিদার কুখ্যাত গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাই বলে অপপ্রচার শুরু করেছে। যা একমাত্র আ’লা হযরতের জীবনীতে কলঙ্ক লেপনের হীন চক্রান্ত। যেহেতু মির্যা গোলাম কাদির বেগ সাহেব ছিলেন আ’লা হযরতে’র শিক্ষক।

তাঁর দৌহিত্র মির্যা আবদুল ওয়াহিদ বেগ মাহনামা হেজাজ পত্রিকায় মির্যা গোলাম কাদির বেগ সম্পর্কে লিখিত প্রবন্ধে বলেন-
ہمر ے خاندان کا کبہی بہی کسی قسم کا کویئ واسطہ و تعلق مرزا غلام احمد قادیانی کذاب سےنہیں رہا حتی کہ ہمارے دور کے عزیزوں کا بہی نہیں-
☞ আমাদের বংশের কারো সাথে কখনো কোন ধরনের সম্পর্ক বা যোগাযোগ মির্যা গোালম আহমদ কাদিয়ানি কাজ্জাব (মিথ্যুক)’র সাথে ছিল না, এমনকি সে শয়তানের সাথে আমাদের কোন সম্পর্কও নাই।
(মাহনামা হেজাজ, নতুন দিল্লি, অক্টোবর ১৯৮৮ সংখ্যা, পৃ. ৬২)

যদিও গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কোন ভাই গোলাম কাদির বেগ নামক থাকে তবে সে অন্য লোক। তার সাথে ইমাম আহমদ রেযা (রহ.)’র কোন সম্পর্ক নাই।
(প্রাগুপ্ত, পৃ. ২৭)

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীর একভাই মির্যা গোলাম কাদির বেগ জন্মগ্রহন করে ১৮৩৩ সালে।
(proved- http://bit.ly/2GOkR62)

কাদিয়ানীর ভাই দুনিয়া নগর থানার পদচ্যুত দারোগা ছিলো। ৫৫ বছর বয়সে কাদিয়ানী নবী দাবী করার ৮ বছর আগে ১৮৮৩ ঈসায়ীতে সে কাদিয়ানে মৃত্যুবরণ করে।

আ’লা হযরতের শিক্ষক হযরত মাওলানা মির্যা গোলাম কাদির বেগ কাদিয়ানীর ভাই মৃত্যুবরণ করার ১৪ বছর পর অর্থাৎ, ১৮৯৭ সালে আ’লা হযরতের কাছে একটি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষাপটে আ’লা হযরত “তাজাল্লিউল ইয়াক্বীন বি আন্না নাবিয়্যানা সাইয়্যিদুল মুরসালীন” (দৃঢ় বিশ্বাসের চেতনায় নবীকুল সম্রাট) নামক একটি বিখ্যাত কিতাব রচনা করেন। (স্কেন প্রদত্ত হল)

হযরত মির্যা গোলাম কাদির বেগের বড় ভাই মাওলানা মতিউর রহমান বেগকে আপন ভ্রাতার সাথে একই কবরস্থানে দাফন করা হয়। মির্যা গোলাম কাদির বেগ (রহ.)’র বড় ছেলে হাকিম মির্যা আবদুল আজিজ ও দু’মেয়েও ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর বড় মেয়ের এক ছেলে এবং ছোট মেয়ের আওলাদগণ এখনো ব্রেলী শরীফে বসবাসরত আছেন।
(ইয়াদে আ’লা হযরতঃ আল্লামা আবদুল হাক্বিম শরফ ক্বাদেরি, পৃ. ৭০)

কাদিয়ানীর ভাই ছিল পদচ্যুত দারোগা…
—————————————————
http://bit.ly/2GPxcqF ওয়েবসাইটে লিখা আছে-

One of the mirza sahib’s (mirza gulam murtaza) sons, Mirza Gulam Qadir, was a sub inspector of police, and Mr. Nisbet, D.C, once suspended him for some reason.
অর্থাৎ, মির্যা সাহেবের (মির্যা গোলাম মর্তুজা) পুত্র মির্যা গোলাম কাদির পুলিশের উপ-পরিদর্শক ছিলেন। এবং ডেপুটি কমিশনার মি. নিসবেট কিছু কারনবশতঃ তাকে বরখাস্ত করেন।

তাহলে প্রমাণ হয়ে গেল মির্যা গোলাম মর্তুজার পুত্র এবং মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাই মির্যা গোলাম কাদির বেগ কোন আলেম ছিলেন না বরং ইংরেজদের আজ্ঞাবহ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।

অথচ আ’লা হযরতের শিক্ষক ছিলেন আলেম এবং হাকিম। অর্থাৎ কাদিয়ানীর ভাই এবং আ’লা হযরতের শিক্ষক এক ব্যক্তি ছিলেন না বরং দু’জন আলাদা ব্যক্তি ছিলেন।

আল্লামা আবদুল হাক্বিম শরফ কাদেরি লিখেন- মির্যা গোলাম কাদির নামক এক ব্যক্তি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাই ছিলো। কাদিয়ানী নবী দাবি করার আট বছর পূর্বে অর্থাৎ, ১৮৮৩ ঈসায়ীতে মারা যান। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী দাবি করে ১৮৯১ ঈসায়ীতে। তার কোন ভাই বাঁশ ব্রেলী, রায় ব্রেলী বা কলকাতায় নেই।
☞ (প্রফেসর মুহাম্মদ মাসউদ আহমদের পত্র মাওলানা শরফ ক্বাদেরিকে, ২৩ ডিসে. ১৯৮৩ ঈসায়ী, পৃ. ৭০)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা যা পাওয়া যায়….
১) আলা হযরতের শিক্ষক জন্মগ্রহন করেন ১৮২৭ খ্রীষ্টাব্দে।
অপরদিকে, কাদিয়ানীর ভাইয়ের জন্ম ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে।

২) আ’লা হযরতের শিক্ষক ছিলেন শিক্ষক, চিকিৎসক এবং আলেম।
অপরদিকে, কাদিয়ানির ভাই ছিল পদচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা।

৩) আলা হযরতের শিক্ষক ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
অপরদিকে কাদিয়ানীর ভাই ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে ৫৫ বছর বয়সে মারা যায়।

সুতরাং, গোলাবী ওহাবী-দেওবন্দী-লা মাযহাবীরা যে মহা মিথ্যুক আর ধোঁকাবাজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

শুধুমাত্র নামে মিল থাকার কারনে “উদোর পিন্ডি বুধোর গায়ে” চাপিয়ে দেয়া নিছক জাহালতি, ধোঁকাবাজী বৈ কিছু নয়। গোলাবী ওহাবীদের জেনে রাখা উচিত যে নির্দোষ ব্যক্তিকে দোষী অপবাদ দেয়ার পরিনাম খুবই খারাপ।

হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে- “সত্য পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায় এবং মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায় আর পাপ নরকে নিয়ে যায়।
☞ (তিরমিযি, ২য় খন্ড, পৃ. ১৮)

সম্মানিত পাঠকদের প্রতি আহবান রইলো, এই মিথ্যুক ধোঁকাবাজের দল ওহাবী, গোলাবী, দেওবন্দীদের মিথ্যাচারে কান দেবেন না। কারন আল্লাহ তা’য়ালার ইরশাদ হচ্ছে-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْتُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْنَادِمِينَ .

◑ হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়। (সূরা হুজুরাত-৪৯ : ৬)

হাদীস শরীফে আছে- “মানুষ গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, প্রত্যেক শ্রুত কথা (বিচার বিবেচনা না করে) মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।
(সহীহ মুসলিম,কিতাবুল ঈমান,হাদীস নং- ০৫)

সুতরাং, হাদীস শরীফের ভাষ্য মতে গোলাবী ওহাবী, দেওবন্দী গংরা মিথ্যাবাদী ফাসেক প্রমাণিত। কারন তারা অন্যের কথায় কান দিয়ে বিচার বিবেচনা না করেই নির্দোষ ব্যক্তির গায়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে।

এতগুলো অখন্ডনীয় প্রমাণের পরও যদি কেউ কাদিয়ানীর ভাই, মির্যা গোলাম কাদির বেগের কাছে আ’লা হযরত শিক্ষা লাভ করেছেন তা হবে জঘণ্য মিথ্যাচারিতা এবং ধোঁকাবাজি। যদি যুক্তির খাতিরে তাদের কথা ক্ষণিকের জন্য আমলে নেয়া হয় সেক্ষেত্রেও আ’লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (রাহুমাহুল্লাহ)’র পবিত্র আকীদা ও সত্ত্বায় সামান্যটুকু অপবাদ ২ মিনিটের জন্যও টিকবে না। কারন, কাদিয়ানীর কুফরির ব্যাপারে সর্বপ্রথম আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) কলম ধরেছিলেন এবং কাদিয়ানীদের কূটকৌশল ও অপতৎপরতা সম্পর্কে মুসলিম মিল্লাতকে সজাগ করেন। শুধু তাই নয় কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াসের আলোকে তথ্যবহুল নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে কাদিয়ানী গংদের কুফরির দাঁতভাঙ্গা জবান দেন।

আ’লা হযরত কর্তৃক ১৩১৬ হিজরীতে লিখিত জাযাউল্লাহে আদুওয়াহ বে আবায়িহি খাতামিন নবুওয়্যাহ (আল্লাহর শত্রুর খতমে নবুয়্যত অস্বীকারে আল্লাহর শাস্তি) পুস্তকে ১২০ টি হাদীস শরীফের আলোকে খতমে নবুয়্যত অস্বীকার করা কুফরি ও হারাম প্রমাণ করেছেন এবং পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম ও মুজতাহিদ ইমামগণের উদ্ধৃতি থেকে আক্বায়েদ ফিকহ উসুল এর আলোকে ৩০ টি উজ্জল প্রমাণ স্থির করেছেন।

☞ কাদিয়ানী সম্প্রদায় সম্পর্কে আ’লা হযরতের ফতোয়া-
————————————————————-
◑ কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুরতাদ তাদের জবেহকৃত পশু অপবিত্র ও মৃত তা ভক্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
☞ (আহকামে শরীয়ত, ১ম খন্ড, ১২২ পৃ.)

◑ কাদিয়ানীদের যাকাত প্রদান করা অকাট্যভাবে হারাম তাদেরকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না।
☞ (আহকামে শরীয়ত, ১ম খন্ড, পৃ. ১২৯)

◑ من شك فى كفره وعذابه فقد كفر-
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার (কাদিয়ানী) কাফের হওয়া ও (পরকালে) শাস্তি পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে সে-ও কাফের।
☞ (ফতোয়া-ই রেযভীয়্যাহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৮১ পৃ. হুসামুল হারামাইন, ৭-১৫ পৃ.)

◑ কাদিয়ানীদের সাথে সম্পর্ক ছিনৃন করা মুসলমানদের জন্য ফরয। তাদের কেউ রোগাক্রান্ত হলে দেখতে যাওয়া, মৃত্যবরণ করলে জানাযায় যাওয়া, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তাদের কবরস্থানে যাওয়া ইত্যাদি অকাট্যভাবে হারাম।
☞ (ফতোয়া-ই রেযভীয়্যাহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৫১)

এছাড়াও আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) কাদিয়ানীদের কুফরি ও গোমরাহি খন্ডনে ৬ টি অকাট্য তথ্যবহুল গ্রন্থ রচনা করেন-

(١) جزاء الله عدوه بابائه ختم النبوة
“জাযাউল্লাহি আদুওয়াহ বি আবায়িহি খতমিন নবুওয়্যাহ। (১৩১৭ হিজরী/১৮৯৯ খ্রী.)

(٢) السوء والعقاب على المسيح الكذاب-
“আসসউল একাব আলাল মসীহিল কাজ্জাব” (১৩২০ হি./১৯০২ খ্রী.)

(٣) قهر الديان على مرتد بقاديان-
“কাহারুদ্দায়্যান আ’লা মুরতাদ বিকাদিয়ান”। (১৩২৩ হি./১৯০৫)

(٤) حسام الحرمين على منحر الكفر والمين-
“হুসামুল হারামাইন আ’লা মানহারিল কুফরি ওয়াল মায়ন”। (১৩২৪ হি./১৯০৬ খ্রী)

(٥) المبين حتم النبين-
“আল মুবিন খাতামুন নাবিয়্যীন”। (১৩২৬ হি./ ১৯০৮ খ্রী.)

(٦) الجر اد الديانى على المرتد القاديانى-
“আল জরাদুদ দ্দায়্যানী আলাল মুরতাদিল কাদিয়ানী”। (১৩২৬ হি./১৯০৮)

এছাড়াও আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) ১৩১৫ হি./১৮৯৭ খ্রী. “আস সারিমুর রব্বানী আলা ইসরাফিল কাদিয়ানী নামক আরেকটি গ্রন্থ প্রনয়ণ করেন।”

সুতরাং, এ কথা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ হল যে, আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) কাদিয়ানীর ভাইয়ের কাছে নয় বরং মাওলানা মির্যা গোলাম কাদির বেগ নামের অন্যজনের কাছে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ওহাবী গোলাবী গংরা যে ভিত্তিহীন অপবাদ দিয়ে আ’লা হযরতের জীবনীতে কালিমা লেপনের অপচেষ্টা করেছিল সেটাও খন্ডিত হল।

এছাড়া এটিও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল, আ’লা হযরত (রাহিমাহুল্লাহ) গ্রন্থ প্রনয়ণের মাধ্যমে কঠোর হস্তে কাদিয়ানী মুরতাদ সম্প্রদায়ের গোমরাহি ও কুফরির মূলোৎপাটন করেন। এই মহান সংস্কারের জন্য মুসলিম মিল্লাত তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।

অতএব, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার পরও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যারা মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি করবে আল্লাহ তাদের এই মিথ্যাচারিতার জন্য তাদের উপর খোদায়ী গযব নাযিল করবেন।

————————————————————-
তথ্যসূত্রঃ
১) আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি‘র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব কৃত অধ্যক্ষ আল্লামা জসিম উদ্দীন রেজভী (রহ.)।

২) ষড়যন্ত্রের অন্তরালে অজানা ইতিহাস কৃত অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম রেজভী।

৩) সুন্নীয়তের পঞ্চরত্ন কৃত অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম রেজভী।

৪) তাজাল্লিউল ইয়াক্বীন বি আন্না নাবিয়্যানা সাইয়্যিদুল মুরসালীন কৃতঃ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ব্রেলভী (রাহিমাহুল্লাহ)

৫) alahazrat.net

৬) http://www.ziaetaiba.com

৭) http://www.reviewofreligions.org

৮) ahmadiyyafactcheckblog.com

৯) m.wikidata.org

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started